কামরুল হাসান হৃদয়: ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ। প্রকৃতির পালাবদলে পঞ্জিকার পাতায় কড়া নেড়েছে বছর ঘুরে আবার মধুমাস। মধুমাসের এ সময়ে সারাদেশেই চোখে পড়ে গ্রীষ্মকালীন নানা ধরণের মুখরোচক ফলের। প্রতি বছরের মতো এবারও গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী ফলে ছেয়ে গেছে লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের বিভিন্ন দোকানপাট।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শহরের দক্ষিণ স্টেশন, ঝুমুর, বাগবাড়ি, উত্তর স্টেশন, চকবাজার, সামাদ মোড় এলাকাতে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী ফলের সমারোহ। এসব ফলের মধ্যে রয়েছে লিচু, আম, কাঁঠাল, তালের শাঁস, আনারস, কলা ইত্যাদি।
এছাড়া মৌসুম শেষ হওয়ায় বিদায়ের পথে থাকা বেল, বাঙ্গি ও তরমুজের মতো ফলও দেখা যাচ্ছে কয়েকটি ফলের দোকানে।
এসব ফলের গন্ধ সুবাস ছড়াচ্ছে প্রতিটি ফল দোকানে। গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী ফলের মধ্যে বর্তমানে দোকানগুলোতে ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে লিচু।
এছাড়া শহরের প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লাতেও ভ্যানে করে ফল বিক্রি করছেন অনেক মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী। শহরের ফল দোকানগুলো থেকে কিছুটা কম দামেই ফল বিক্রি হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ ভ্যানগুলোতে।
শহরের বাগবাড়ি ও উত্তর স্টেশনের ফলের দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, বিক্রেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌসুমী ফল বিক্রিতে। তারা মূলদোকানের সামনের অংশে মৌসুমী ফল রেখে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন।
হিমসাগর, লেংড়াসহ বিভিন্ন জাতের আম, বিভিন্ন জাতের লিচু শোভা পাচ্ছে ফল দোকানগুলোতে। তবে লিচু পুরোদমে পরিপক্ক হলেও আম মাত্র আসতে শুরু করেছে বাজারে।
ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ফলের বাজারের বেশির ভাগ অংশ থাকবে মিষ্টি ও রসালো আমের দখলে।
ফল ব্যবসায়ী আবদুল বলেন, এখন বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে লিচু। প্রকার ভেদে প্রতি একশ লিচু বিক্রি হচ্ছে আড়াইশো থেকে তিনশো টাকায়। তবে গতবারের তুলনায় এবার দাম কিছুটা বেশি।
অপর ব্যবসায়ী মামুন বলেন, আমের বেচাকেনা এখনো জমে উঠেনি। তবে লিচুর এখন ভরপুর মৌসুম। তাই লিচুর ব্যবসা জমজমাট।
এছাড়া মৌসুমের শেষ দিকে হলেও এখনও বাজারে তরমুজ আছে কয়েকটি দোকানে। দুইশ থেকে ৩শ টাকা পর্যন্ত প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে এসব ছোট ছোট তরমুজ।
ফল কিনতে আসা মামুন নামের এক ক্রেতা বলেন, গ্রীষ্ম মৌসুমের নানান ধরণের দেশীয় ফল এখন বাজারে এসেছে। এগুলো মানুষের শরীরের জন্য খুবই উপকারি। আমি তিনশো টাকা দিয়ে একশো লিচু কিনেছি। তবে দাম গতবারের চেয়ে একটু বেশিই মনে হচ্ছে।
লিচু শত হিসেবে বিক্রি হলেও বাসা / বাড়িতে গিয়ে গুনলে কম পড়ে কী না এবিষয়ে জানতে চাইলে মামুন আরো বলেন, আমি বিগত বছরগুলোতে শত হিসেবে লিচু কিনে বহুবার প্রতারিত হয়েছি। কখনো আটাশিটির উপর পাইনি, তাই এবার সচেতন হয়েই গুনে নিচ্ছি।
এদিকে চকবাজার ও সামাদমোড় এলাকাতে গিয়ে দেখা গেছে বিভিন্ন ধরনের ফলের সমারোহ। এখানে উত্তরবঙ্গের ও দেশি কাঁঠাল এবং আনারস বিক্রি জমজমাট। মাঝারি আকারের একটি কাঁঠাল কিনতে ক্রেতাদের খরচ হচ্ছে একশত থেকে দেড়শত টাকা। আর বড় সাইজের কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকায়। আর আনারসের হালি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও মাস দেড়েক আগে আনারসের দামে ভাঁটা ছিল।
এছাড়া শহরের গার্লস স্কুল রোড এবং বাগবাড়ি ও কলেজ রোড এলাকায় তালের শাঁস বিক্রি হচ্ছে। এগুলো প্রতিটি ১৫ থেকে ৩০ টাকা করে দাম রাখা হচ্ছে।
ভ্যানে করে মৌসুমী ফল বিক্রেতা আখতার হোসেন বলেন, আগে ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করতাম। এখন মৌসুমী ফলের চাহিদা বেশি। তাই ফল বিক্রি করছি। দোকানের চেয়ে দাম কিছুটা কম নিচ্ছি বলে মানুষ ফল কিনছেন। এতে আমার লাভও ভালো হচ্ছে। দৈনিক প্রায় ৩-৪ হাজার টাকার ফল বিক্রি করছি।
মৌসুমী এসব ফলের বাজারদর এবং কোনোপ্রকার রাসায়নিক পদার্থ মেশানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মার্কেটিং কর্মকর্তা মনির হোসেন জানান, আমরা সার্বক্ষণিক বাজার মনিটরিং করছি এবং লক্ষ্মীপুরের এসব ফল একদম নির্ভেজাল। তবে গত বছরের তুলনায় দাম কিছুটা বেশি। তবুও আমরা সবকিছু ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছি যেনো ক্রেতারা প্রতারিত না হয়।