কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: ১৭ অক্টোবর থেকে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসব।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা ও লালন একাডেমির আয়োজনে আগামী ১৭ ই অক্টোবর ১লা কার্তিক থেকে কুষ্টিয়ায় শুরু হচ্ছে মরমী সাধক বাউল সম্রাট লালন সাঁই এর ১৩২ তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে স্মরোণৎসব।
অক্টোবরের ১৭ তারিখ, বাংলা ১লা কার্তিক লালন সাইজির মৃত্যুবার্ষিকী। প্রতিবছর এই দিনকে কেন্দ্র করে ছেঁউড়িয়ায় ভক্ত-সাধকদের মিলনমেলা বসে। অনুষ্ঠান চলে ৩ দিন ব্যাপী, যা লালন মেলা নামে পরিচিত। রাত ভর চলে লালন গানের আসর। বছরের এই ৩ টা দিন লালন আখড়া থাকে জমজমাট। লালন মেলা উপলক্ষে আখড়াবাড়ীর লালন মাজারকে সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। প্রধান ফটক আর মূল মাজারে সাদা লাল নীল আলোকসজ্জা, বিশাল তোরণ নির্মাণ ও লালন মঞ্চের সামনে বিশাল ছামিয়ানা টাঙানো হয়। মঞ্চের চারপাশ ও লালন মাজারের প্রধান রাস্তাজুড়ে বসে গ্রামীণমেলা। মেলায় নানা রকম গৃহসামগ্রী, কাঠের তৈরি সাংসারিক নানা জিনিসপত্র, বাউল গানের অন্যতম বাদ্যযন্ত্র একতারা, ঢোল, তবলাসহ থাকে বিভিন্ন ধরণের বাদ্যযন্ত্রের বিরাট সমারোহ। গরম জিলাপি, পাঁপড় ভাজা, শন পাঁপড়ি, নানা ধরণের শরবত, খই-বাতাসাসহ হরেক রকম খাদ্যদ্রব্যের পসরা বসে লালন মেলাকে কেন্দ্র করে। করোনার কারণে পর পর দুই বছর লালন স্মরোণৎসব বন্ধ ঘোষণা করেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন। এবারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় বিরাট কর্মযজ্ঞ হাতে নেয়া হয়েছে।
এবার ফকির লালন সাঁই এর ১৩২ তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যৌথভাবে পুলিশ এবং কুষ্টিয়া র্যাব-১২ কে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া লালন একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্তমান বিশেষ কমিটির সদস্য মো. তাইজাল আলী খান। এবারও মাজার প্রাঙ্গনে আলোচনা সভা ও লালন মেলা অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে মাজার প্রাঙ্গণ পরিষ্কার করে সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কাজ করছে একাডেমি কর্তৃপক্ষ। সব ঠিক থাকলে এ সপ্তাহ থেকেই ভক্ত-অনুসারীরা লালন আখড়ায় আসতে শুরু করবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। কুষ্টিয়া লালন একাডেমির সদস্য লালন শিল্পী নাদিম শাহ বলেন, “লালন সাঁই এর বার্ষিক স্মরণোৎসব উপলক্ষে তার সাধন-ভজনের তীর্থস্থান ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণ এবার পরিণত হবে উৎসবের আমেজে। দেশ-বিদেশ থেকে লালনভক্ত, বাউল অনুসারী ও সুধীজনসহ অসংখ্য মানুষের আগমন ঘটে এখানে। এবারো তার ব্যতিক্রম হবে না।” লালন স্মরণোৎসব ও গ্রামীণ মেলাকে কেন্দ্র করে মাজার প্রাঙ্গণ ও তার আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুরো মাজার এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। জেলা পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে বলে নিশ্চিত করেছে জেলা প্রশাসন।