কামরুল হাসান হৃদয়, লক্ষ্মীপুর:
মো. নোমান(৪০)। এলাকায় বড়ো মিয়া নামে পরিচিত। নামে বড়োমিয়া হলেও গতরে আর আয়ে বড়োমিয়া বড়ো হতে পারেননি। নোমান লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ১৯নং তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ক্ষুদ্র ঋণের বোঝা কাঁধে নিয়ে কেনেন ব্যাটারিচালিত অটো রিকশা। সে রিকশা পাড়াগাঁয়ে চালিয়ে রোজগার হয় ৪০০-৫০০টাকা। তা দিয়ে দুই সন্তান ও সস্ত্রীক নোমানের ৪সদস্যের সংসার এবং বাড়তি টাকাগুলো পেটকে আধভরা রেখে তুলে রাখতে হয় সপ্তাহের মাথায় কিস্তির জন্য।
এদিকে মাসখানেকের প্রবল বর্ষণ এবং জোয়ারের পানিতে নোমানের ঘরবাড়িসহ পুরো এলাকা প্লাবিত। দোচালা ঘরে জোয়ারের পানির হানায় খুলে গেছে টিনের তারকাঁটা, আলগা হয়ে গেছে ঘরের সিমেন্টের পিলারগুলো। নোমানের কপালজুড়ে চিন্তার ভাঁজ। শেষ কবে দুসন্তানকে আগলে রেখে চিন্তাহীন মগজে রাতে ঘুম দিয়েছেন সে দিনতারিখ ভুলে গেছেন তিনি।
রাত হলে আতঙ্ক বাড়ে সাপের পায়চারির। প্রতিবেশি আব্দুলের স্ত্রী তৈয়বা বেগম দিনেরবেলা নাম না জানা লম্বা-লম্বা দুটো সাপ মেরেছেন শুনে তটস্থ নোমান ও তার স্ত্রী আসমা বেগম।
আতঙ্ক এবং আয়রোজগারে ভাঁটার বর্ণনা দিতে গিয়ে কয়েকদিনের নির্ঘুম-মলিন চেহারার নোমান বলেন, টানা বৃষ্টিতে আমাদের পুরো এলাকা ডু্বে গেছে। সে সাথে কোমর সমান পানি ছিলো আমার বাড়িজুড়ে। কিছুটা কমলেও এখনো হাঁটুসমান পানি। এ পানিতে আমার ঘর নড়বড়ে হয়ে গেছে। রিকশা ঠিকমত চালাতে পারি না। ঠিকমত চালডাল কিনতে পারি না। শুনেছি চারদিকে ত্রাণ পায় সবাই। কিন্তু আমরা এক প্যাকেট মুড়িও পাইনি। খুব কষ্টে আছি ছেলে-মেয়ে নিয়ে।
নোমানের ঘরের ভেতরে ঢুকলে সেখানেও দেখা মেলে অথই পানির। পানির ভয়ে ছেলেমেয়ে দুজনেই খাটে বসে আছে উদাম গায়ে। চারদিকে ছড়ানো-ছিটানো ঘরের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রগুলো। চুলা আর হাড়িপাতিল দেখলে মনে হয় শেষ কদিন আগে রান্না হয়েছে এসবে তার দিন বহুদূর।
রান্না আর খাবারের কথা জানতে চাইলে নোমানের স্ত্রী বলেন, রান্নাতো করতে পারি না। শুকনা খাবার এনেই খাই। বাচ্চাদের নিয়ে খুব কষ্টে আছি। এভাবে আর কয়দিন থাকবো? কেউতো কিছু দেয়ও না আমাদের।
স্থানীয় ফারহান আহম্মেদ নামক এক যুবক বলেন, বড়োমিয়া (নোমান) আমার প্রতিবেশী। সে অনেক দুঃখ-কষ্টে দিনাতিপাত করে। আমরা এ বন্যায় গ্যাসের চুলায় রান্না করতে পারি। কিন্তু বড়োমিয়ার মতো লোকদের তো আয়রোজগার-ই বন্ধ। এদের জন্য সম্মিলিতভাবে সকলের এগিয়ে আসা উচিত।