কামরুল হাসান হৃদয়: শিক্ষার্থীদের পিঠার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে এবং বাঙালি সংস্কৃতির অংশ হিসেবে লক্ষ্মীপুরে পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া গ্রাম বাংলার পিঠার সাথে বেড়ে যাওয়া দূরত্ব কমাতে আর শৈশবের স্মৃতি স্মরণ করার লক্ষ্যে শিক্ষক – শিক্ষার্থী এবং অভিভাকদের সম্মিলনে এ পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর তানযীমুল মিল্লাত একাডেমির উদ্যোগে
শনিবার ( ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ) সকাল ৯টায় প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল মাওলানা কামরুজ্জামান ফিতা কেটে পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন। বিকেল ৩টা পর্যন্ত ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা আর আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে চলে এ পিঠা উৎসব।
প্রিন্সিপাল কামরুজ্জামান বলেন, প্রথমবারের মতন মাদ্রাসায় আমাদের এমন আয়োজন। আমাদের আয়োজনে শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে এবং সাবেক শিক্ষার্থী আর অভিভাকরাও প্রবল ইচ্ছা নিয়ে এসে অনুষ্ঠানের সার্থকতা এনে দিয়েছে। এমন আয়োজন প্রতিবছর হবে কী না, এমন প্রশ্নে তিনি জানান, এ উৎসবে যে সাড়া দেখেছি এবং শিক্ষার্থীদের যে উৎসাহ উদ্দীপনা দেখেছি তাতে প্রতিবছর-ই আমাদের এমন আয়োজন অব্যাহত থাকবে ইনশা – আল্লাহ।
প্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গণে বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ৮টি পিঠা স্টল ব্যতিক্রমী নান্দনিক নাম দিয়ে বসিয়েছে পিঠার পসরা। পিঠা স্টলগুলোর নাম, হাউমাউ পিঠা স্টল, পিঠা বিলাস, শখের পিঠা স্টল, ফাইভ স্টার পিঠা স্টল, ইট পিঠা বি মিঠা, উইন্টার পিঠা স্টল, সুইট’স অ্যান্ড স্পাইসি কেক এবং ধানসিঁড়ি।
স্টলগুলোর নামে ব্যতিক্রমী নান্দনিকতার জন্য শিক্ষার্থীরা প্রশংসা কুড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ফয়সাল বিন মাহমুদের সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রত্যেকটি স্টল এখানে ব্যতিক্রমী নাম চয়েস করেছে। যে নামগুলো অন্যান্য পিঠা উৎসবের স্টলগুলো থেকে একেবারেই আলাদা এবং তিনি আরো বলেন, এ পিঠা উৎসব দেখে শৈশবের স্মৃতিগুলো নাড়া দিচ্ছে, মনে হচ্ছে এক দিনের জন্য সেই ফেলে আসা শৈশব স্মৃতিতে নাড়া দিয়ে গেছে।
পিঠা স্টলে ৩০ রকমের ব্যতিক্রমী পিঠা ছিলো, তন্মধ্যে পিঠাজগতে ব্যতিক্রমী যে পিঠাগুলোর দেখা মিলেছে তা হলো, রুপচাঁদা পিঠা, সিঁড়ি পিঠা, চালতা পিঠা, ইলিশ পিঠা, মানতাসা পিঠা, ঝুনঝুনি পিঠা, মায়া পিঠা, শামুক পিঠা, ফ্রাই পিঠা। এ ছাড়াও গ্রামীণ পিঠার মধ্যে পসরায় ঠাঁই পেয়েছে চিতই পিঠা, পাঁচ পিঠা, পুলি পিঠা, খোলাজা পিঠা, ঝাল পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা, শুকনা পিঠা, ভাঁপা পিঠা, সেমাই পিঠা।
ব্যতিক্রমী পিঠার নাম সম্পর্কে জানতে চাইলে শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া বলেন, নামেই ফুটে উঠে যেকোনো কিছুর আকর্ষণ, হোক সেটা পিঠা বা অন্যকিছু। নামে যদি শৈল্পিকতা কিংবা আধুনিকতা থাকে তাহলে ক্রেতা এবং দর্শনার্থীর মনে কৌতুহল জাগে সে জিনিসের প্রতি। তাই নামের ক্ষেত্রে এমন চিন্তা থেকেই ব্যতিক্রমী নাম চয়েস করা হয়েছে। জান্নাতুল মাওয়া দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং শখের পিঠা স্টলের ওনার।
আরেক শিক্ষার্থীর সাথে বিক্রির পরিস্থিতি জানতে চাইলে বলেন, যে টাকা খরচ হয়েছে তা উঠবে না নিশ্চিত, তবে যে আনন্দের ভাগ পেয়েছি তা হাজার টাকা দিয়েও কেনা সম্ভব না। তাই সবকিছুতে জেতা বা লাভের চিন্তা করি না। লাভ হয়নি তাই পরের উৎসবে অংশগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে আরো বলেন, লাভ হোক বা লস, পিঠা উৎসবে যতবার অংশগ্রহণের সুযোগ হয় ততবার-ই অংশগ্রহণ করবো। কারণ এতে যে আনন্দ পাই তাতেই সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।
পিঠা উৎসবের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক বোরহান উদ্দীন রব্বানী বলেন, শহরাঞ্চলে থাকা শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ-ই অনেক পিঠার সাথে পরিচিত না, তাই শিক্ষার্থীদের গ্রামীণ পিঠার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে এবং পিঠার অনেক ধরন থাকে সে বিষয়ে পরিচয় করাতেই আমাদের এমন আয়োজন। শৈশবের কথা স্মরণ করে তিনি আরো বলেন, ছোটোবেলায় চুলার পাশে বসে গরম ধোঁয়া উঠা পিঠার সে মুহূর্তগুলোর কথা মনে পড়ে গেলো। এবং অপরিচিত অনেক পিঠার সাথে পরিচিত হয়েছেন বলেও তিনি জানান।
পিঠা উৎসবে ঘুরে দেখা যায়, ৮টি স্টলেই যার – যার সহকারীরাসহ দাঁড়িয়ে পিঠা বিক্রি করছে এবং ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। ক্রেতারাও ধীরে সুস্থে ভীড় কেটে পিঠা খাচ্ছে এবং কিনছে পছন্দের পিঠা। সে সাথে শিক্ষার্থীরা আনন্দের সাথে দর্শনার্থী এবং ক্রেতাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে নাম না জানা বিভিন্ন রকম পিঠার সাথে। পিঠাগুলোর বিক্রির দাম খরচসম, মূলত আনন্দ এবং মিলনমেলার জন্যই ছিলো এমন আয়োজন, এমন কথাই বলেন শিক্ষার্থীরা। সরব উপস্থিতি এবং উচ্ছ্বাস ছিলো অভিভাকদের মাঝেও।
একজন অভিভাকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমার দুই মেয়ে এখানে পড়ে। এমন উৎসবের কথা শুনে ছুঁটে এসেছি। এসে মনে হচ্ছে ক্ষণিকের জন্য হারালাম গ্রামীণ ঐতিহ্যে, যা আমাকে অনেক আনন্দিত করেছে। এমন আয়োজন শিক্ষার্থীদের জন্যে পড়াশুনার পাশাপাশি খুব প্রয়োজন।