ভারত জোড়ো যাত্রা শেষ হয়েছে।এটা ছিল বৃটিশ প্রশাসনের ভারতবর্ষে মহাত্মা গান্ধীর – বৃটিশ ভারত ছাড়ো – কুইট ইন্ডিয়া মুভমেন্টের”” আদলে তৈরি একটি আন্দোলন। খুব দরকার ছিল – এই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে।
ঐটা ছিল বৃটিশ প্রশাসনকে দেশছাড়া করবার শপথ। আর “”রাহুল গান্ধীর”” নেতৃত্বে এই আন্দোলন ছিল সাম্প্রদায়িক বিজেপি_নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রদায়িক হিংসা হানাহানির বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির “”ভারত জোড়ো যাত্রা””” আন্দোলন।
একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক যাত্রা – যেখানে তিনি ভোট চাননি / কংগ্রেস দলের হয়ে সরাসরি সমর্থন চাননি / কথায় কথায়, আর পাঁচটা কংগ্রেসী নেতার মত, জওহরলাল, ইন্দিরা গান্ধী বা রাজীব গান্ধীর নাম নেননি – সেই যাত্রা, আর যে যাই বলুক, আমার মতে অবশ্যই ঐতিহাসিক। একজন মানুষ ৩৫০০ হাজার কিলোমিটার পায়ে হেঁটেছেন , ১২টি রাজ্যের ৫২টি জেলার অজস্র লোকের সাথে কথা বলেছেন – কিন্তু, মুখে ভোট চাননি , অফিসিয়ালি ঘৃণার ও সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতির বিরুদ্ধে তিনি এই দীর্ঘ সফরকে যুক্ত করেছেন, যা আজকের জাতপাত, ধর্ম ও জুমলা রাজনীতির যুগে বেমানান হয়ত অনেকের কাছে, কিন্তু আমার কাছে এই মুহূর্তে ঐ “পাপ্পু” তকমা পাওয়া “রাজনৈতিক শিক্ষানবিশ” ই এই সময়ের প্রকৃত জননেতা। নয়ের দশকের গোড়ায় অযোধ্যার রামমন্দিরের জন্য লালকৃষ্ণ আদবাণীর কথা বলবেন কেউ কেউ- কিন্তু, তা ছিল মূলত বাতানূকূল গাড়ীতে চেপে – যার নাম দেওয়া হয়েছিল রথ – রাজনৈতিক উদ্দ্যেশ্য সাধনের সফর। সে উদ্দ্যেশ্য অবশ্য অচিরেই সফল হয়েছিল।
৫২ বছরের রাহুল গড়ে প্রায় ২৪-২৫ কিলোমিটার হেঁটেছেন প্রায় রোজ, ফলে, তার ‘পাপ্পু’ হিসেবে গড়ে তোলা শাসক দলের পোষ্টারকে ছিঁড়ে ভেদ করে, মানুষের কাছে এবং অগণন কংগ্রেস কর্মীদের কাছে নতুন বার্তা নিয়ে এসেছেন। লোকে রাহুলের সাথে কথা বলেছে, দেদার সেলফি তুলেছে , নিজেদের এলাকার ক্ষোভ – বিক্ষোভের কথা জানিয়েছে, পরের দিকে কিছু সেলিব্রেটি নিজেদের প্রতিবাদী হিসেবে চিহ্নিত করতে এই ঐতিহাসিক যাত্রায় রাহুলের সাথে ছবি-টবি তুলেছে – কিন্তু, বাজী ফেলে বলা যায়, তাঁদের জীবদ্দশায় এমন একজন রাজনেতা তাঁরা দেখেননি। এমন নয় যে এর ফলে ঘৃণার বাতাবরণ ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেল, বা ভারতে, সংস্কৃতিগত ‘বৈচিত্র্যের’ মধ্যে গদগদ ‘ঐক্যের ‘ রূপ ধারণ করল – কিন্তু, এটা ঠিক, সাধারণ মানুষের কাছে বিভাজনের বিকল্প হিসেবে , হিন্দু- অহিন্দু’র সাদা-কালো’র বাইনারী রাজনীতির বিকল্প হিসেবে , একটি অন্য রাজনীতি তুলে এনেছেন। যে রাজনীতি কাজের , রোজগারের, উন্নতির, সঠিক শিক্ষার এবং ক্ষিদের । রাহুলের এই পুরো যাত্রার প্রাপ্তি শুধু এইটুকুই ।
কিন্তু, যাই রাহুলের পক্ষে ভালো , তাই কি কংগ্রেসের পক্ষে ভালো? এই যাত্রার সদর্থক ফলাফল কি কংগ্রেস ভোটের বাক্সে আশা করতে পারে? দুটির প্রশ্নেরই সম্ভাব্য উত্তর – হয়তঃ না। কিন্তু এই মুহূর্তে রাহুল গান্ধীর এই চেষ্টা ও একাগ্রতা ই বা কি কম পাওনা?