তসলিমা নাসরিন ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে চির পঙ্গুত্বের দিকে ধাবিত হচ্ছেন। এ খবরটি তিনি নিজেই দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তার এ নাচার অবস্থার খবরে অনেকে আনন্দ প্রকাশ করছেন। অনেক বুঝাতে চাইছেন, এটা খোদার দুনিয়াবি বিচার।
অযৌক্তিক ও অতি উগ্র ভাবনা এবং ধর্মবিদ্বেষের কারণে তসলিমা নাসরিনকে আমার কখনোই ভালো লাগেনি। তাকে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত মনে হয়েছে সবসময়। কিন্তু তার দুর্দশায় যারা উচ্ছ্বসিত আমি তাঁদেরকে আরো বেশি বিকারগ্রস্ত মনে করি। সবকিছুর পরেও তসলিমা নাসরিন একজন মানুষ। তার মত ও পথকে আমি সমর্থন করি না, কিন্তু তার অমঙ্গলও চাই না কখনো। সৃষ্টিকর্তা কাকে কী কারণে বিপদগ্রস্ত করেছেন তা তিনিই ভালো জানেন। অনেক আলেম ও ধার্মিক মানুষও অপঘাতে মৃত্যুবরণ করেন। কেউ কেউ দুরারোগ্য ও দুঃসহ যাতনাময় ব্যাধিতে ভোগেন। তাদের এমন পরিণতির কারণ কী? এমন প্রশ্ন তুললে সবাই মুখস্থ উত্তর দিবেন, এটা তাদের ঈমানী পরীক্ষা কিংবা পাপমোচনের উপলক্ষ। আমি মনে করি, সবকিছুর কার্যকারণ সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহ অবহিত, আর কেউ নয়।
পৃথিবীতে তসলিমা নাসরিনের মতো অসুস্থচিন্তার মানুষ কম নয়। নিরীশ্বরবাদীদের সংখ্যাও গণনাতীত। তাদের কারো জন্যে আলো-বাতাস-খাবার-পানির সরবরাহ সৃষ্টিকর্তা বন্ধ করেননি। তাদের মতো ভিন্নমতাবলম্বীদের উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তাও হয়তো আছে। হয়তো সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব এবং তার উদারতা ও মহত্ত্ব প্রমাণের জন্যে আল্লাহ তাদের লালন-পালন করে যাচ্ছেন।
মানুষের দুর্ভোগে আনন্দিত হওয়াকে আমি সমর্থন করি না, তা যে বিশ্বাসেরই হোক। আমি তসলিমা নাসরিনের রোগমুক্তি কামনা করি। সেই সাথে তার চিন্তা ও মানসিকতারও সুস্থতা কামনা করি। একজন বিশ্বাসী হিসেবে আমি এভাবে ভাবতে চাই, খোদাবিরোধী বলে তসলিমার জীবনে এই বিপদ নেমে আসেনি, বরং এই দুর্ভোগ তাকে খোদাকে চেনাতে সহায়তা করবে।
আমরা জানি না সৃষ্টিকর্তা কার জন্যে কী পরিণতি নির্ধারণ করে রেখেছেন। চিরদিন ধর্মকর্ম করেও অনেকরে ভাগ্যে ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ জোটে না।
আল্লাহ বলেন, ‘ তোমরা মুসলমান হওয়া ছাড়া মারা যেও না।’ (৩:১০২) অর্থাৎ শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ঈমান আনার সুযোগ রেখেছেন আল্লাহ। তাই একজন মুসলমান তসলিমার হেদায়াত কামনায় দোয়া করতে পারেন, তার দুর্ভোগে খুশি হতে পারেন না।