ইলিশ মাছ
"""""""""""""""""""
এপাশ ওপাশ গড়াগড়ি করেও এক চিলতে ঘুমের দেখা মেলেনি। এক সময় ধাঁ করে পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠল। অল্পক্ষণ পরেই রোদ বিছিয়ে দেয় বাড়ির উঠোন জুড়ে। রছিয়ার মা বাসি ভাতে লবন পানি মিশিয়ে মুখে তুলছে। সাঁ সাঁ করে বসন্তের বাতাস বইছে। সে দিকে লক্ষ্য রাখার প্রয়োজন নেই তার। এমনি একদিন তার স্বামী জলের উপর নৌকা ভাসিয়ে মাছ ধরতে গেলো। আর সে ফিরলো না। কত দিনক্ষণ অপেক্ষার পরেও সে বসন্ত আর দেখা দেয়নি। এটি ঋতু রাজ বসন্ত নয়, জীবনের বসন্ত। যে জীবন দুয়ার থেকে একবার সরলে বছর গড়িয়েও আর ফিরে আসে না।
স্বামীকে হারানোর পরে রছিয়ার মা মেয়েকে কোলেপিঠে করে দিনাতিপাত করেছে। আজ সে এক দীর্ঘশ্বাস। যখন মেয়েটার হাঁপানির ব্যারাম উঠতো তার কষ্ট দেখে রছিয়ার মার দমবন্ধ হয়ে যেতো। এই বাতাশের মধ্যে কি আছে যে দম নিতে না পারলে কেমন ছটপট করে। আজও চোখের সামনে ভাসে মেয়ের আর্তনাদ। একটু শ্বাস নিতে গলা বুকে আঘাত করে কত বাঁচার চেষ্টা করছে। মেয়ে পৃথিবীর থেকে চলে গেছে তাও ভালো। কষ্ট থেকে বেঁছে গেছে। নয়তো খেতো কি? পরতো কি? মানুষের দুয়ারে দুয়ারে বকা খেয়ে কি আর মানুষ বাঁচে? কত মানুষ মরে গিয়ে বেঁচে যায়। সেটাই ভালো। সহ্য করতে হয়না পৃথিবীর নিষ্ঠুরতা।
এখনো কানে বাজে মনে হয় সেদিনে কথা। রছিয়ার বাপ নদী থেকে ইলিশ মাছ নিয়ে আসছে। রান্নাবান্না শেষে তিনি জিজ্ঞেস করে,
_কয় টুকরা রানছো মাছ??
_তিন টুকরা।
_তিন টুকরা ক্যান?
_এক টুকরা আম্নের, দু টুকরা আমার। আমার তো বাবুরে খাওয়ান লাগে। আর আজ কতদিন ইলিশ মাছ দেখেনা।
সেদিন লাঠি ঠুকে মালোদের ঘরে যায় তাদের মাছ রান্না করছে। ইলিশ মাছের গন্ধটাও অপরিচিত লাগে রছিয়ার মা'র কাছে। হাজারো দুঃখ কষ্টের মাঝেও ভিক্ষার স্বভাব রপ্ত করতে পারেনি। নয়তো একটুকরা খুঁজে নিতো।
পৃথিবীর মানুষ গরিবদের এড়িয়ে চলে। তাই অসহায় মানুষ কাউকে পায়না একটু যে কথা বলবে। কত হাজার কথা বুকে জমে থাকে। শুনার মতো কেউ নেই,,,কিন্তু রছিয়ার মার মানুষ লাগেনা। নিজেই বিড়বিড় করে বকে চলে,,,,
_মানুষটা যে গেল আর বুঝি ফিরবোনা। জনমের তরে চইল্যা গ্যাছে।
আমারেই খালি মরন নাই। মাইয়া গেলো, স্বামী গেলো।
বাসি ভাত আর নামেনা গলা দিয়া। আবার আনমনে বলে,,,
_দু টুকরা ইলিশ মাছ হইলে চারটা গরম ভাত খাইতে পাত্তাম।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মির্জা সাইফুল ইসলাম, ঠিকানা: দারুল মুসাফির ( নিচ তলা ) আব্দুল গণি হেড মাস্টার রোড, সদর, লক্ষ্মীপুর।