অজানার দ্বার উন্মোচন করে বই। বই পড়ার অভ্যাসটি অনেকেই রপ্ত করেন না বা করতে পারেন না। বই জীবনীশক্তি সঞ্চার করে। মনের ক্ষুধা মেটায় বই। বই মানুষের চোখ ফোটায়। সে চোখ মাছির মাথার মতো নয়। মাছির মাথার চারিদিকে অসংখ্য চোখ আছে। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে মাত্র দুটি চোখ দৃশ্যমান হয়। এ চোখকে অগণিত চোখে পরিণত করা যায় শুধুমাত্র বই পড়ে। মানবজীবন নিতান্তই একঘেয়ে দুঃখ-কষ্টে ভরা, কিন্তু মানুষ বই পড়তে বসলেই সেসব ভুলে যায়। জগতে শিক্ষার আলো, নীতি-আদর্শ, ইতিহাস-ঐতিহ্য, কৃষ্টি-সভ্যতা, সাহিত্য-সংস্কৃতি সবই জ্ঞানের প্রতীক বইয়ের মধ্যে নিহিত। শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতিমূলক কোনো মজাদার বইয়ের বিষয়বস্তু বা ঘটনা মানুষ সহজে ভুলে যায় না। পৃথিবীতে বিনোদনের কত কিছুই না আবিষ্কৃত হয়েছে, কিন্তু বই পড়ার নির্মল আনন্দের কাছে সেগুলো সমতুল্য হতে পারেনি। তাই জীবনের অবসর সময়গুলো বইয়ের নেশায় ডুবে থাকা দরকার। একদিন ভাষাবিদ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ লাইব্রেরিতে বসে বই পড়ছিলেন। লাইব্রেরিয়ান ভুলবশত লাইব্রেরিতে তালা দিয়ে বাড়ি চলে যান। পরদিন এসে দেখেন তিনি পড়ার মধ্যে নিমগ্ন আছেন। লাইব্রেরিয়ান তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, আপনি সারা রাত লাইব্রেরিতে ছিলেন? তখন তার ধ্যান ভেঙে গেল। তিনি মুখ তুলে তাকালেন। এ থেকে বুঝা যায় বইয়ের প্রতি কতটা ভালোবাসা থাকলে সবকিছু ভুলে বই নিয়ে পড়ে থাকা যায়।
একটা সময় ছিল যখন তরুণদের অনেকেরই অবসর সময় কাটত বই পড়ে। নতুন বইয়ের ভাঁজ খুলে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা উল্টে পড়ার মধ্যে তারা অন্য রকম এক আনন্দ পেত। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সবুজ ঘাসে কিংবা চায়ের দোকানে তরুণদের সাহিত্য আড্ডা বসত। সেসব আড্ডায় গল্প হতো শিল্প, সাহিত্য, রাষ্ট্র, সমাজ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে; ইন্টারনেটের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো হয়ে উঠেছে খুব জনপ্রিয়। বই পড়া কমেছে, কমেছে বইয়ের উপযোগিতা। বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্র এখন শিক্ষিত তরুণ সমাজের দিনরাত্রির সঙ্গী। মননশীলতা চর্চার অভাবে সুকুমার বৃত্তিগুলো যেন হারিয়ে যেতে বসেছে।
ক‘দিন আগে একটি পত্রিকায় পড়লাম, ইরানের একটি আদালতে নাকি সর্বোচ্চ শাস্তি বইপড়া। চমৎকার উদ্যোগ। যিনি বই পড়েন তিনি কখনো মন্দ কাজ করতে পারেন না। সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত। যথার্থ শিক্ষিত হতে হলে মনের প্রসার দরকার। তার জন্য বই পড়ার অভ্যাস বাড়াতে হবে। তাই বই পড়ার বিকল্প নেই। একজন ভালো মানুষ হতে হলেও বই পড়তে হবে। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগ। লেখকেরা মননশীল ও বৈচিত্র্যময় লেখার মাধ্যমে তরুণদের আকৃষ্ট করবেন। প্রকাশনা সংস্থাগুলোর উচিত সহনশীল মূল্যে সে বই বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া। অভিভাবকেরা বই পড়ার বিষয়ে উৎসাহিত কর উচিত সন্তানদের। এভাবে বই পড়াকে সামগ্রিক একটি সামাজিক আন্দোলনের রূপ দিতে হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মির্জা সাইফুল ইসলাম, ঠিকানা: দারুল মুসাফির ( নিচ তলা ) আব্দুল গণি হেড মাস্টার রোড, সদর, লক্ষ্মীপুর।