মা, বাবা, ভাই হারানোর বেদনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখন অনেক মানবাধিকারের কথা বলা হয়, অথচ ১৫ আগস্টের ঘটনায় সেসময় আমরা তো বিচার চাইতেও পারিনি। আমাদের পাশে কেউ দাঁড়ায়নি।
মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) সকালে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ‘শেখ রাসেল দিবস ২০২২’ এর উদ্বোধন ও শেখ রাসেল পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে যুক্ত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, চৌধুরী নাফিজ শারাফাত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অল্প বয়সে রাসেলের জীবন প্রদীপ শেষ হয়ে যায়। শিশু হত্যা নারী হত্যা রাষ্ট্রপতিকে হত্যা এই হত্যার বিচার না করার একটা আইন করে রাখা হয়। কেউ খুনিদের বিচার করতে পারবে না। ইন্ডিমিনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়। অর্থাৎ আমি আমার মা বাবা ভাই যাদের হারিয়েছি আমি বিচার চাইতে পারব না, মামলা করতে পারব না। আমি আর রেহেনা বিদেশে ছিলাম আমাদের দেশেও আসতে দেয়নি। আমাদের ছয়টা বছর রিফিউজি হয়ে থাকতে হয়েছে। আমার প্রশ্ন আজকে তো অনেক মানবাধিকারের কথা বলা হয়। কেউ মারা গেলে বিচার চাওয়া হয়। আমরা কি অপরাধ করেছিলাম যারা ১৫ আগস্ট আমাদের আপনজন হারিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা কেউ বিচার চাইতে পারব না। এখানে আমার একটা প্রশ্ন আজকে আন্তর্জাতিকভাবে কত কিছু হয় মানবাধিকারের কথা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদ কত কিছু হয় কই তখন কেউ তো আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। হ্যাঁ আমার দল এবং বাংলার জনগণ ছিল। কিন্তু যারা ঘাতকদের সঙ্গে ছিল, ঘাতকদের সহযোগিতা করেছিল বা চক্রান্তের সঙ্গে ছিল বা ঘাতকদের পুরস্কৃত করেছে। এই অন্যায় অবিচারগুলো তো নিজে চোখে দেখেছি। আজ মানবতার কথা মানবাধিকারের কথা, এত কথা শুনি। আমার এই প্রশ্নের জবাব কি কেউ দিতে পারবে? বিচার করতে পেরেছি তখনই ২১ বছর পর অনেক ঘাত-প্রতিঘাত চড়াই উৎরাই পার হয়ে যখন আমি সরকার গঠন করলাম, যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছি তখনই ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাদ দিতে পেরেছি। বাতিল করার পথেও তো অনেক বাধা। আমরা জানি আমরা শুনি বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। ঠিক সেটাই হয়েছিল আমাদের ব্যাপারে। অর্ডিন্যান্স বাতিল করতে আমাদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। বিচার কাজ শুরু করার পর জজ সাহেব অনেকে মামলা করতে চাননি বিব্রতবোধ করছেন। এই বিব্রত বোধ হওয়াটাও তো আমার চোখে দেখা।
সরকারপ্রধান বলেন, ৭৫ এরপর যারা ক্ষমতায় এসেছে যেমন জেনারেল জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ, খালেদা জিয়া প্রত্যেকেই খুনিদের মদদ দিয়েছে। পুরস্কৃত করেছে। এমনকি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন সে খুনি পাশা এবং হুদাকে নিয়ে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি নামের রাজনৈতিক দল করেছিল। অর্থাৎ রাজনৈতিকভাবে তাদেরকে পুনর্বাসিত করা হয়েছিল। জেনারেল এরশাদ খুনি ফারুককে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করেছিলেন। খালেদা জিয়া খুনি রশিদ এবং হুদাকে জনগণের ভোট চুরি করে, আজকে তারা ভোটের কথা বলে ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ ভোটারবিহীন নির্বাচনে তাদেরকে নির্বাচিত করে সংসদে বসিয়েছে। তাদের মুখেই ভোটের কথা শুনতে হয়।
তিনি আরও বলেন, জেনারেল জিয়া সেনাপ্রধান হয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিল। তাদের মুখে আমাদের গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়। ভোটের কথা শুনতে হয়, মানবাধিকারী কথা শুনতে হয়।
তিনি বলেন, আমার চাওয়া এদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন একটা সুন্দর জীবন পায়, নিরাপদ জীবন পায়, উন্নত জীবন পায় সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আর আমরা স্বজনহারা বেদনার কান্না শুনতে চাই না। পিতাহারার সন্তানের কান্না শুনতে চাই না। সন্তানহারা পিতার কান্না শুনতে চাই না। বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ কত শিশু এতিম হয়ে যাচ্ছে। কত শিশু আজকে কষ্ট পাচ্ছে। আমরা যুদ্ধ চাইনা সংঘাত চাই না। রাসেলের মত আর কেউ জীবন দিক সেটাও আমি চাই না। আমরা চাই প্রত্যেকের ভবিষ্যৎ সুন্দর হোক, উন্নত হোক। যুদ্ধ চাই না, ধ্বংস চাই না, অস্ত্র প্রতিযোগিতা চাই না, আমরা শান্তি চাই।