ঢাকাশুক্রবার , ১৪ অক্টোবর ২০২২
  1. আন্তর্জাতিক
  2. ইসলাম
  3. কলাম
  4. খেলাধুলা
  5. গণমাধ্যম
  6. জাতীয়
  7. দূর্ঘটনা
  8. দেশজুড়ে
  9. নির্বাচন
  10. বিনোদন
  11. রাজনীতি
  12. শিক্ষাঙ্গন
  13. শোক সংবাদ
  14. সাহিত্য

এ প্রজন্মের ভাষা ও আমরা – ফাতিহুল কাদীর সম্রাট

ডেস্ক এডিটর
অক্টোবর ১৪, ২০২২ ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

কয়েকদিন আগে আমার কলেজের অফিসিয়াল পেইজে পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর কিছু ছেলেমেয়ের মন্তব্যের ভাষা দেখে কর্তৃপক্ষের ভাষাহারা হবার জো। অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহারের জন্যে একজন মেয়ে স্টুডেন্টকে প্রতিষ্ঠান ছাড়তে হয়েছে। ছেলেমেয়েদের ভাষাজ্ঞান ও ভাষিক রুচির বিষয়টি সামনে আসে ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময়। তখন ব্যানার ফেস্টুন প্লাকার্ড দেওয়াল ও সড়কলিখনে এমন সব কথা ও শব্দের ব্যবহার করা হয় যা ছিল খুব বিব্রতকর।
আজকের ছেলে মেয়েমেয়েদের ভাষা ও সাংস্কৃতিক চেতনা সত্যি অচেনা। আমাদের মতো সাবেকিদের কাছে যা গালি তা-ই তাদের কাছে সাধারণ বুলি। ছেলে-মেয়েরা এই ভাষা পেল কোথায়, কারা শেখালো সে বিষয়টি ভেবে দেখতে, তাদের ঢালাওভাবে দোষ দিয়ে লাভ নেই। দায় আমাদেরই।
বাচ্চারা ভাষা শেখে পরিবারে, সমাজে। তাদের ভাষা খারাপ কারণ আমরা খারাপ ভাষা ব্যবহার করি ঘরে ও বাইরে। আমাদের কয়টি পরিবারে সৃজনশীলতা ও মূল্যবোধের চর্চা আছে? কয়টা পরিবারে গালাগালি ছাড়া দিন শুরু হয়? কোনো কোনো পরিবারে পারস্পরিক যোগাযোগের সাধারণ ভাষাও গালির পর্যায়ে পড়ে। সমাজে বিভিন্নর স্তরে আমাদের সাধারণ যোগাযোগের ভাষা খিস্তিখেউরের তুল্য নয়কি? রাস্তার মাঝে রিকশা ফেলে চালকরা যখন মল্লযুদ্ধে লিপ্ত হয় তখন তাদের মুখ থেকে যে গালির ফোয়ারা ছুটে তখন তার কিছু আপনার কোলে বসে থাকা বাচ্চার মেমরিতে সঞ্চিত হয়ে যাওয়া অসম্ভব নয়। স্কুলের শিক্ষকদের অশ্লীল ভাষার প্রয়োগ নিয়ে আমার বড় ছেলে অভিযোগ করেছে, ছোটোটাও করছে। বাচ্চারা অনেক সময় অর্থ না বুঝেও অনেক ভাষার প্রয়োগ করে। আমার একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করি।
আমার বড় ছেলে তখন থ্রি-ফোরে পড়ে। ভ্যানে করে স্কুলে যায়। একদিন স্কুল থেকে ফিরে সে তার মাকে বলে, ‘আম্মু তুমি না খানকা।’ ওর মা আমাকে বলে, তোমার ছেলে এটা কী বলছে? আমি বললাম, সে তার সহপাঠী, ফুটপাতে বা চলার পথে বা কোথাও কারো মুখে কোনো মহিলাকে খানকি বলতে শুনেছে। এই শব্দটির সাথে সে পরিচিত নয়, কিন্তু মহিলাদের সম্বোধনে যে ব্যবহৃত হয় সেটা সে বুঝেছে। বাড়ি ফেরার পথে শব্দটির উচ্চারণ আংশিক ভুলে গেছে সে। ‘খানকি’ হয়ে গেছে তাই ‘খানকা’। একবার ক্লাস এইটে এইটে পড়া ছোট ছেলের খাতার ব্যাক কভারে একটি নোংরা ইংরেজি শব্দ লেখা দেখতে পেয়ে তাকে সামনে দাঁড় করালাম। কাঁপতে কাঁপতে সে বলল, প্রথমত সে শব্দটি লেখে নাই, তার কোনো সহপাঠী লিখেছে, দ্বিতীয়ত সে শব্দটির মানে জানে না। আমি আমার বোকাটে অতি সরল সন্তানকে অবিশ্বাস করতে পারিনি। আমার বাসায় এমন শব্দ কখনোই উচ্চারিত হয় না। আমার বাচ্চার খাতায় এমন নোংরা শব্দ এলো কীভাবে সেটার সামাজিক প্রেক্ষাপট আলোচনার যোগ্য।
আমার ছোটো ছেলেটা যেবার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে ভর্তি হয় সেবার ছিল ভর্তিবাণিজ্যের বছর। ক্লাস ওয়ানে এক হাজারেরও বেশি বাচ্চাকে টাকার বিনিময়ে ভর্তি করানো হয়েছিল। আমি একদিন স্কুলে গিয়ে হতবাক। অধিকাংশ বাচ্চা ওভার এইজড, তাদের আচরণ ও কথাবার্তাও বেশ মেচিউর। টাকার জোরে ভর্তি করানো ধনী ও আনকালচার্ড পরিবারের আদুভাই গোছের বাচ্চাদের সঙ্গপ্রভাব আমার বাচ্চার ওপর পড়া অস্বাভাবিক নয়। এর জন্যে দায়ী কে? ভর্তিবাণিজ্যের শত শত কোটি টাকা যারা হাতিয়ে নিয়েছে তারা তো সমাজের ওপর তলায় ভালো মানুষ সেজে বসে আছে।
বাচ্চাদের ভাষারুচির অবনমনের ক্ষেত্রে আমাদের নাটক সিনেমা টেলিভিশন আগে থেকে সক্রিয় ছিল। সাম্প্রতিক নাটক সিনেমার সংলাপে লৌকিক ভাষা টেনে আনতে গিয়ে আমাদের রুচিবোধেই টান দেওয় হয়েছে। নতুন উপদ্রব তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তার। শোসাল মিডিয়া বিশেষ করে ফেসবুক ইউটিউব টিকটকের ক্যারিকেচার টাইপের বিভিন্ন অরুচিকর কন্টেন্ট আমাদের ভাষিক রুচির ক্ষেত্রে শুধু নয় সাংস্কৃতিক স্টান্ডার্ডে বিপর্যয় ডেকে এনেছে। সোশাল মিডিয়ার প্রভাবে ছেলে ও মেয়েদের ভাষায় ঐতিহ্যগত যে পার্থক্য ছিল তা আজ আর নেই বললেই চলে। ছেলেদের গালি এবং মেয়েদের গালি এখন বলে আলাদা আর কিছু নেই। এখানে নারী-পুরুষের সমতা অর্জিত কীভাবে হয়েছে সেটির সামাজিক কার্যকারণ নিয়ে গবেষণা চলতে পারে।
মিডিয়ায় চর্চিত বিষয়গুলো কীভাবে শিশুদের মনোস্বাস্থ্য ও ভাষাবোধের ওপর প্রভাব ফেলছে সেটি নিয়ে গবেষণা হতে পারে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় একজন সরকারি কর্কমর্তাকে বিবস্ত্র করা হয়েছিল। মিডিয়া সেটাকে সভ্যরূপ দিতে দিগম্বর শব্দটি ব্যবহার করেছিল। বাচ্চারা তখন বড়দের কাছে দিগম্বর শব্দের মানে জানত চাইত। এখনকার অনেকশিশু বাবা-মার কাছে কাছে জানতে চায় তারা ডিভোর্স কবে করবে বা করেছে কি না। পর্নো, ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, বলাৎকার, সমকাম, পরকীয়া এসব বিষয় এখন সমাজে ডালভাতের মতো। শিশুদের কৌতূহলী মন এদের রহস্যভেদ করতে চাইলে তাদের দোষ দেওয়া যায় না।
ভাষা ও সাংস্কৃতিক রুচি সভ্যতার প্রতীক। এ দুটির বিচারে আমরা যে অসভ্যতার দিকে দ্রুত অগ্রসরমান তা নিসন্দেহে বলা যায়।

সহযোগী অধ্যাপক ( বাংলা বিভাগ) লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
error: Content is protected !!