কিছুদিন আগে একটি অফিস কম্পাউন্ডের মসজিদে জুমার নামাজ পড়েছিলাম। সেই মসজিদে মিহরাবের পাশ দিয়ে একটি চোরাই দরোজা আছে। সেই দরোজা দিয়ে ভিআইপি তথা বিশেষ ব্যক্তি প্রবেশ করেন। আগ-কাতারে ইমাম সাহেবের ঠিক পেছনে বিশিষ্টের জন্যে জায়গা বিশেষভাবে নির্ধারিত। সাধারণের প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রবিষ্ট হলে বিশিষ্টের বিশিষ্টতা তো আর থাকে না! তাই এ ব্যবস্থা। তাছাড়া সবার শেষে এলেও যাতে সামনের কাতারে নির্ধারিত জায়গাটি নিশ্চিত থাকে সেটাও একটা কারণ বলে আমার অনুমান।
ইসলামের দৃষ্টিতে মসজিদে বিশিষ্ট ব্যক্তি বলে কেউ নেই। মসজিদে বিশিষ্ট ব্যক্তি একজনই, তিনি ইমাম। সেজন্যে রাসূল সা. ও খলিফাগণ নিজেরাই ইমামতি করতেন। মসজিদে জামাতে নামাজ পড়ার জন্য এত যে তাড়া তার পেছনে মূল কারণ মানুষের সংহতি ও সম্প্রীতি নিশ্চিত করা, বৈষম্য ও বিভাজনরেখা নিশ্চিহ্ন করা। মসজিদ আল্লাহর ঘর এ ঘরে সবাই আল্লাহর দাস। দাসের ইতরবিশেষ নেই, সবাই সমান। কিন্তু বাংলাদেশে সেই মসজিদেও মানি আর মাসলের দৌরাত্ম্য। বাংলাদেশের মসজিদগুলোতে ইসলামের আদর্শিক চেতনা এবং নির্দেশনা উপেক্ষিত।
মসজিদে কারো জন্যে জায়গা নির্ধারিত করে রাখা নিষেধ। কাউকে সরিয়ে কাউকে জায়গা করিয়ে দেওয়া নিষেধ। কারো জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা করা নিষেধ। এ কথাগুলো ইমাম সাহেবরা জানলেও বলেন না।
একজন পঙ্গু ভিখিরির খুব সাধ আমিরুল মুমিনিন ওমর রা. কে খুব কাছ থেকে একবার দেখবে। কীভাবে খলিফা দর্শনের এই সাধ পূরণ হবে তার জানা ছিল না। প্রচণ্ড রাগী আর মহাপরাক্রমশালী খলিফা বলে কথা। তিনি একজন সাহাবির সাথে নিজের আকাঙ্ক্ষার কথাটি শেয়ার করলে তিনি বলেন, খলিফাদর্শন তো মামুলি ব্যাপার। খুব কাছে থেকে দেখতে চাইলে আগেভাগে মসজিদে নববিতে গিয়ে প্রথম কাতারে ইমামের ঠিক পেছনে জায়গা দখল করে বসে পড়লেই হলো। খুব কাছে থেকে শুধু তিনি খলিফাকে দেখতে পাবেন না, খলিফার মুখ থেকে খুৎবাও শুনতে পাবেন। তখন সেই লোকটি অবিশ্বাসের সুরে বললেন, আমি একজন ভিখিরি মাত্র। সাহাবিসহ কত নামিদামি মানুষ আছেন, আমার মতো একজন ভিখিরি ইমামের ঠিক পেছনে বসতে চাইলেই কি হল? তখন সেই সাহাবি বললেন, কেউ যদি তোমাকে সেখান থেকে সরায় আর কথাটি যদি খলিফার কানে যায় তাহলে খলিফা তার গর্দান নেবেন।
আজকের দিনে ইমামরা সামান্য বেতনভুক কর্মচারিমাত্র। মুখ ও ওজন চিনে তোয়াজি আচরণ এবং মুনাজাত করে চাকরি বাঁচিয়ে চলেন অধিকাংশ ইমাম। তাঁদের অনেকে শক্তিমানের নির্দেশনার কাছে বিসর্জন দেন ইসলামের নির্দেশনাকে। কোনো কোনো ইমাম ব্যক্তিবিশেষের অনুকূলে এমন দোয়া করেন, যা শুনলে মনে হবে, আল্লাহ বেকাসোকা একটি সত্তা। এ ধরনের মুখাপেক্ষী অমেরুদণ্ডী ইমামের পেছনে নামাজ হয় কি না সেটা একটা প্রশ্ন বটে। এখন বাড়িতে বাড়িতে মসজিদ। মসজিদের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু কমছে সাহসী ও ইসলামী আদর্শের প্রতি অনুগত ইমাম।
ফাতিহুল কাদীর সম্রাট
সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ
সম্পাদক ও প্রকাশক : মির্জা সাইফুল ইসলাম, ঠিকানা: দারুল মুসাফির ( নিচ তলা ) আব্দুল গণি হেড মাস্টার রোড, সদর, লক্ষ্মীপুর।